ইউরোপে প্রথম বস্ত্র ছাপার উৎপত্তি হয়েছিল। ছাপা একটি আলংকারিক শিল্প। বস্ত্রের জমিনকে উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় করার জন্য ছাপা ব্যবহার করা হয়।ব্লক ছাপার বিশেষ নিয়ম সম্পর্কে এ পোষ্টের মাধ্যমে আলোচনা করব। সাধারণত কাঠের উপরে খোদাই করা বিভিন্ন নকশা অঙ্কন করে ব্লক তৈরি করা হয়।
ব্লক ছাপা সবচেয়ে প্রাচীন পদ্ধতি। যেকোনো কাঠে বিভিন্ন ধরনের নকশা প্রণয়ন করে পরবর্তীতে কাপড়ে ছাপ দেয়াকেই ব্লক ছাপ বলে অভিহিত করা হয়। প্রাচীনকালের মানুষেরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কাপড়ে নকশা বা ডিজাইন করতো।বস্ত্র ছাপার বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে ব্লক ছাপা অন্যতম।
পোস্ট সূচিপত্রঃব্লক ছাপার বিশেষ নিয়ম -ব্লক ছাপার সহজ পদ্ধতি
আমরা অনেকেই ব্লক ছাপ পদ্ধতির সাথে পরিচিত। তবে সঠিক পদ্ধতিতে কিভাবে কাপড়ের ব্লগ ছাপ দেওয়া হয় সেই মাধ্যম সম্পর্কে অজানা । তাই এই পোষ্টের মাধ্যমে ব্লগ ছাপার বিশেষ নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। ব্লকে রং লাগিয়ে বস্ত্রে যে ছাপ করা হয় তাকে ব্লক প্রিন্ট বলে। বর্তমানে বাজারে ব্লগ কিনতে পাওয়া যায়। আবার অনেকে তাদের পছন্দমত কাঠে নকশা করে ব্লক তৈরি করে।
কাঠে নকশা তৈরি করে যেমন কাপড়ের ডিজাইন করা যায় ঠিক তেমন প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমেও ব্লক তৈরি করা যায়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান যেমন: ঢেঁড়স, আলু, গাজর, শাপলা প্রভৃতি ব্লক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।এ সকল উপাদান ধারা কাপড়ে বিভিন্ন প্রকারের নকশা তৈরি করা যায়। তবে এসব ব্লগ একেবারে বেশি ব্যবহার করা যায় না। অর্থাৎ একবার কিংবা দ্বিতীয়বার ব্যবহারের পর পুনরায় সেটি আর ব্যবহার করা যায় না।তাই এই সকল উপাদান একের অধিক প্রয়োজন।
ব্লক ছাপ করতে হলে শুধু কাঠের ব্যবহারই যথেষ্ট নয় এর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমেও ব্যবহার হয়ে থাকে। আবার অনেকে চাইলে রাবারে পছন্দ মতো নকশা তৈরি করে কাপড়ের ডিজাইন করতে পারবে। অর্থাৎ ব্লক ছাপ করতে হলে বিভিন্ন উপাদানের ব্যবহার খুব সহজেই করা যায়। প্রাকৃতিক উপাদান গুলো ধারা ব্লক তৈরি করা তেমন কঠিন কাজ না।
ব্লক তৈরি করতে সবার প্রথমে যেকোনো কাঠ বা রাবার নিতে হবে। তারপর কাঠ কিংবা রাবারে পছন্দমতো নকশা এঁকে নিতে হবে। এরপর ধারালো বস্তু দিয়ে রাবার অথবা বাটালি দিয়ে কাঠ খোদাই করে নিতে হবে। নকশার জায়গাটি উঁচু রেখে বাকি অংশ কেটে নিতে হবে। যদি ব্লক তৈরি করতে কাঠ ব্যবহার করা হয় তাহলে কাঠের ব্লকে খোদাই করার পর সিরিশ দিয়ে ঘষে উপরের অংশ মশৃণ করে নিতে হবে।
আর যদি ব্লকটি রাবারের হয়ে থাকে তাহলে রাবারটিকে ধার বস্তু কিংবা অ্যান্টিকাটার দিয়ে কেটে সহজে ব্লক তৈরি করা যায়। আলু,গাজর,ঢেঁড়স প্রভৃতিতে একই প্রভৃতিতে একই পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্লক তৈরি করা।ঢেঁড়স বা শাপলার ডাঁটা কাটলে ডিজাইন দেখা যায়। এতে কোন ডিজাইন করার প্রয়োজন হয় না । আবার ডাঁটা কেটে রং মেখে কাপড়ে ছাপ দিলেই ডিজাইন বসে যাবে। প্রাকৃতিক উপাদান গুলো দ্বারা নকশা করতে তেমন ঝামেলার সৃষ্টি হয় না।
ব্লক ছাপার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
ব্লক ছাপার বিশেষ নিয়ম সম্পর্কে আপনারা ইতিমধ্যে জানতে পারবেন। তার আগে ব্লক ছাপার জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আবশ্যক।প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছাড়া ব্লক ছাপার কাজ সম্পূর্ণ হবে না।নিম্নে ব্লক ছাপার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম হলোঃ
কাঠের টেবিল
কালার ট্রে
ব্লক( কাঠ বা রাবারের)
বিভিন্ন সাইজের ব্রাশ
চট
পুরোনো কম্বল
কাঠের স্ট্যান্ড
ফোম১/৪ বা ১০.৮ সে.মি. মোটা
ব্লক ছাপার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম তৈরি
ব্লক ছাপার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। সেগুলোর উপর ভিত্তি করে ব্লক ছাপার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু সরঞ্জাম তৈরি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। যেমনঃটেবিল তৈরি, কালার ট্রে, রং তৈরি, একরামিন পোস্ট তৈরি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে।ব্লক ছাপার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম তৈরি সম্পর্কে জানা যাক।
টেবিল তৈরিঃটেবিলের উপর তিন-চার ভাঁজ চট বিছিয়ে চটের উপর একটি পুরনো কম্বল বিছাতে হবে। তার উপর একটি মোটা মার্কিন কাপড় বিছিয়ে ব্লক করার জন্য টেবিল তৈরি করতে হবে।
কালার ট্রেঃএকটি চারকোনা বাক্স নিতে হবে।বাক্সটির তলায় কাঠের পরিবর্তে রেকসিন লাগাতে হবে।তার উপরে পাতলা ফোম বা মসৃণ চটের টুকরা বিছিয়ে ব্লকে লাগানোর জন্য রং নিতে হবে।
রং তৈরিঃসাধারণত ব্লকে একরামিন রং ব্যবহার করা হয়। একরামিন পেস্ট তৈরি করার জন্য যে সকল উপাদান প্রয়োজন এবং এর পরিমান সম্পর্কে নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
একরামিন রং ২/৩ চা চামচ
বাইন্ডার-২ চা চামচ
ফিকচার-১ চা চামচ
এন কে-১ চা চামচ
পানি-প্রয়োজনমতো
একরামিন রং তৈরি করার জন্য যেসব দ্রব্যের প্রয়োজন সেগুলো একের পর এক করে উল্লেখ করা হলো।পরিমাণ মতো উপরিউক্ত দ্রব্যগুলো মিশিয়ে একরামিন রং তৈরি করা হয়। একরামিন রং তৈরি করতে হলে এই সকল দ্রব্যগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ব্লক ছাপার বিশেষ নিয়ম
ব্লক ছাপার বিশেষ নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে হলে প্রথম থেকে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়তে হবে পড়তে হবে। ব্লক ছাপা সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। প্রাচীনকালের ব্যক্তিগণ ব্লক ছাপানো মাধ্যমে কাপড় বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন প্রণয়ন করত। তখন থেকেই এ মাধ্যমটি বেশ জনপ্রিয়।ব্লক ছাপ সঠিকভাবে করতে হলে সম্পূর্ণ নিয়ম ধারাবাহিকতার সাথে লক্ষ্য করতে হবে যাতে কোন একটি নিয়ম বাদ না পড়ে।ব্লক ছাপার বিশেষ নিয়ম সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে ব্যাখ্যা করা হলোঃ
যে কাপড়ে ব্লক করা হবে, সে কাপড়টি ভালো করে ধুয়ে মাড় ফেলে নিতে হবে। কারণ কাপড়ে মাড় থাকলে রং ভালোভাবে বসবে না।
তারপর কাপড়টিকে টেবিলের উপর টানটান করে বিছাতে হবে।
স্ট্যান্ড বা পাশে ছোট টেবিলের উপর কালার ট্রে রাখতে হবে।
কালার ট্রের মধ্যে ফোমের উপর ব্রাশ বা চা চামচ দিয়ে রং মাখাতে হবে।
ব্লকটি ফোমের উপর রেখে চাপ দিয়ে ব্লকের রং বাড়াতে হবে।
এরপর রংভরানো ব্লকটি কাপড়ের উপর চাপ দিলে কাপড়ে ব্লকের ছাপা হয়ে যাবে।
একাধিক রঙের নকশা ছাপাতে একাধিক ব্লক প্রয়োজন। সেই সাথে একাধিক কালার ট্রেও একাধিক ব্রাশ দরকার।
উপরোক্ত ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাপড়ে সঠিকভাবে ব্লক ছাপার কাজটি সম্পন্ন করা যায়। যদি ব্লকে রং কম ওঠে তাহলে কাপড়ে রঙের ছাপ হালকাভাবে বসে। তাই রংয়ের মিশ্রণ কিছুটা পাতলা করে নিতে হবে যাতে ভালোভাবে কাপড়ে রং বসতে পারে।যদি কাপড়ের কোন জায়গায় রং হালকাভাবে বসে তাহলে ব্রাশ দ্বারা সেই জায়গাটি গাঢ় করে ঠিক করতে হবে। উপরের কোন একটি নিয়ম ভালোভাবে পালন না করলে ব্লক ছাপার কাজটি ভালো ভাবে সম্পূর্ণ হবে না । তাই সকল কাজ মনোযোগ সহকারে করতে হবে।
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ব্লক ছাপার সহজ নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এই পদ্ধতিতে কাপড়ে ডিজাইন বা নকশা করলে কাপড়ের সৌন্দর্য অধিক বৃদ্ধি পায়।ব্লক ছাপা সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে এই ওয়েবসাইটটির পাশে থাকুন।
মিম ব্লগার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url